‘হাজীগঞ্জ বাজার’ এর যানজট নিরসনে মতবিনিময় সভা

সাইফুল ইসলাম সিফাত : চাঁদপুর জেলার বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র হাজীগঞ্জ বাজারের ফুটপাত ও প্রধান সড়ক দখল করে গড়ে ওঠা হকারদের ব্যবসা ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে সরিয়ে নিতে হবে এমন কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন চাঁদপুর জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন।

‘হাজীগঞ্জ বাজার’ এর যানজট নিরসনে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, হকার ও সুধীজনদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার (২১ জুন) বিকালে উপজেলা পরিষদের হলরুমে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “সরকার রাস্তা বানিয়েছে পরিবহণ চলাচলের জন্য, ব্যবসা বসানোর জন্য না। ফুটপাত জনগণের হকারদের নয়। কিভাবে ফুটপাত দখল মুক্ত করতে হয়, তা আমরা জানি। তাই বলছি, লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার নিজ উদ্যোগে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে রাস্তা ছাড়তে হবে। এরপর আর কোনও আলোচনা হবে না।”

জেলা প্রশাসক বলেন, “আমি বারবার মানবিক কারণে আপনাদের ডেকে কথা বলেছি, সুযোগ দিয়েছি। কিন্তু কোনো অগ্রগতি দেখছি না। এখন সময় এসেছে জনগণের অধিকারের পক্ষে কঠোর হওয়ার। প্রশাসন প্রয়োজনে কঠোর আইন প্রয়োগ করবে, কারণ মানুষের চলাচলের অধিকার কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত হতে পারে না।”

তিনি বলেন, হাজীগঞ্জ বাজারের যানজট নিরসনে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা বার বার সড়ক ও ফুটপাত দখলকারীদের অনুরোধ করেছি। বিভিন্ন সময়ে ভ্রাম্যমান আদালত ও অভিযান পরিচালনা করেছি। তাতে কোন লাভ হয়নি। আপনারা (সড়ক ও ফুটপাত দখলকারী) আমাদের মূল্যায়ন করেন নি। সুতরাং আপনাদেরকে আগামি ৩১ জুলাই পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে আপনাদেরকে সড়ক ও ফুটপাত ছেড়ে দিতে হবে।

হকারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, পহেলা (১) আগস্ট থেকে আমরা কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এতে আপনারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। দীর্ঘ সময় ধরে মানবিক দিক বিবেচনা করে আমরা অনেক ছাড় দিয়েছি। কিন্তু আর নয়, আপনাদের ২/৪’শ হকারের জন্য উপজেলার ৫ লাখ লোক ও সড়ক পথের যাত্রী এবং পথচারিরা ভুক্তভোগী হচ্ছেন। আমরা তা হতে দিতে পারিনা। এভাবে চলতে পারে না। জনস্বার্থে আমরা কঠোর হতে বাধ্য হচ্ছি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আব্দুর রকিব বলেন, তিনি বলেন, “বাজারে জনদুর্ভোগ দিনদিন বাড়ছে। “নাগরিকের চলাচল নিশ্চিত করতে পুলিশ সব সময় প্রস্তুত। ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়ছে এটা আর চলবে না।”

সভায় উপস্থিত ছিলেন সেনাবাহিনীর উপ-অধিনায়ক ২১ বীর আশিকুর রহমান আশিক। তিনি সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, “আমরা যে কোনো ধরনের নাগরিক নিরাপত্তা ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় রাখতে প্রশাসনকে সর্বাত্মক সহায়তা করব। এ বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হচ্ছে।”

সভায় উপস্থিত কয়েকজন হকারের মধ্যে একজন জানান, আক্তার সর্দার বলেন, “আমি গত ১৫ বছর ধরে ফুটপাতে বসে বেচাকেনা করি। মাননীয় জেলা প্রশাসক আমাদের দিকেও একটু সু-দৃষ্টি দিবেন। আমাদের সন্তানরা আজীবন আপনার জন্য দোয় করবে।

অন্য এক হকার, মনির বলেন, “ছেলে-মেয়েকে স্কুলে পড়াই। এই ফুটপাতই আমার ভরসা। আমি চাই, প্রশাসন আমাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করুক।”

তবে হকারদের একাংশ জেলা প্রশাসকের মানবিক উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন। মনির, তরকারি দোকানি বলেন, “জেলা প্রশাসক আমাদের সঙ্গে বারবার বৈঠক করেছেন, সেটা আমরা বুঝি। আমরা চাই, আমাদের জন্য একটা ছোট জায়গা বরাদ্দ হোক, যেখানে আমরা আইনের মধ্যে থেকে ব্যবসা করতে পারি।”
হাজীগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আশফাকুল আলম চৌধুরী বলেন, “পথচারী ও যান চলাচলে যে ভোগান্তি তৈরি হয়েছে, তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। হকারদের পুনর্বাসনের একটি গ্রহণযোগ্য পন্থা বের করতে হবে, যাতে সবার স্বার্থ রক্ষা হয়।”

ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শাহাবুদ্দিন বলেন, “বাজার ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফেরানো খুবই জরুরি। তবে হকারদের জীবিকা রক্ষা করেও এটি করা সম্ভব, যদি সকলে আন্তরিক হই।”

সভায় কেউ কেউ হকারদের পুনর্বাসন নিয়ে প্রশ্ন তুললেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়নি। তবে জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, “অবৈধ দখলদারিত্ব কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। মানবিক দৃষ্টিকোণ থাকলেও, আইন প্রয়োগে আমরা পিছপা হবো না।”

৩১ জুলাই—এই তারিখের পর হাজীগঞ্জ বাজারে আর অবৈধ দখল থাকবে না বলে আশাবাদী জেলা প্রশাসন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এটাই ছিল শেষ বৈঠক, এবার কার্যক্রম শুরু হবে মাঠপর্যায়ে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইবনে আল জায়েদ হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব, সেনাবাহিনীর ২১ বীরের উপ-অধিনায়ক মেজর মো. আশিকুর রহমান আশিক।

বক্তব্য রাখেন, জামায়াতে ইসলামীর উপজেলা আমীর বিএম কলিমুল্লাহ, নায়েবে আমীর মোজাম্মেল হোসেন মজুমদার পরান, পৌর আমীর আবুল হাসানাত পাটওয়ারী, ইসলামী আন্দোলনের উপজেলা সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক সুমন মোল্লা, এনসিপি নেতা শাহাদাত হোসেন, প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান মাহমুদ, মহিউদ্দিন আল আজাদ, সাইফুল ইসলাম সিফাত, মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্, এনায়েত মজুমদার, পাপ্পু মাহমুদ।
ব্যবসায়ীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, হাজীগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাহাবউদ্দিন শাবু, শিল্প বিষয়ক সম্পাদক হাফেজ মো. আবুল কাশেম, ওয়ার্ড কমিশনার মহিউদ্দিন মাইনু, ব্যবসায়ী হাফেজ মো. মহসিন, আলী আশ্রাফ, হকারদের মধ্যে আব্দুল হান্নান, আকতার সর্দার, খাজা মাস্টার প্রমুখ।

সভার শুরুতেই পবিত্র কোরআন মাজিদ থেকে তেলওয়াত করেন, মাও. মো. মাজহার রাফি ও গীতা থেকে পাঠ করেন, ঝুটন ভৌমিক।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশিকুর রহমানের উপস্থাপনায় সভায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) মুকুর চাকমা, সেনাবাহিনীর হাজীগঞ্জ ক্যাম্প কমান্ডার ল্যাফ. মানজুরুল ইসলাম, হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুক, হাজীগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলহাজ্জ্ব আসফাকুল আলম চৌধুরী, ইসলামী আন্দোলনের উপজেলা সহ-সভাপতি হাফেজ শাহাদাত হোসেন প্রধানীয়াসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, প্রেসক্লাব ও ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ ও বাজারের হকাররাসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত খবর