
স্টাফ রিপোর্টার : চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ফরাজীকান্দি ইউনিয়নের চরমাছুয়া এলাকায় ধনাগোদা নদীর বুক চিরে গড়ে তোলা হয়েছে কোটি টাকার অবৈধ স্থাপনা—‘ধনাগোদা রিভারভিউ ভাসমান রিসোর্ট অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’।
স্থানীয় প্রভাবশালী সিদ্দিকুর রহমান নির্মিত এই বিশাল ভাসমান রেস্টুরেন্টটি একদিকে যেমন নদীর স্বাভাবিক প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করছে, অন্যদিকে জননিরাপত্তা ও পরিবেশ রক্ষায় সরকারি দায়িত্বশীলদের নিষ্ক্রিয়তা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
গত ৪ জুন একাধিক স্থানীয় পত্রিকায় নদী দখলের বিষয়টি তুলে ধরার পরও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। বরং নদী সংরক্ষণ আইন, বেরি বাঁধ দখল করে স্থায়ী ভবন নির্মাণ, পানি আইন ও বিদ্যুৎ ব্যবহারবিধির ধারাবহিক লঙ্ঘনের পরও কর্তৃপক্ষের নীরবতা যেন প্রভাবশালীদের প্রশ্রয় দিচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে—প্রশাসনের চোখ কেন এত সহজে বন্ধ হয়ে যায়?
প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরি রেস্টুরেন্টটিতে ২১টি কক্ষ ও ২০০ জনের বসার ব্যবস্থা রয়েছে, যা কার্যত ধনাগোদা নদীর একটি বড় অংশকে ব্যক্তিমালিকানায় রূপান্তর করেছে। এতে নদীর প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে, জমেছে কচুরিপানা, ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ, মাছের প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে।
রেস্টুরেন্টটিতে নেই কোনো উদ্ধার সামগ্রী, সাঁতারু, বা জরুরি সাহায্যের সংযোগ। নদীতে ঘুরতে আসা পর্যটকরা ১৫-২০টি ছোট নৌকায় চলাচল করলেও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কেউ নেই। সন্ধ্যার পর নারী পর্যটকদের হয়রানির অভিযোগও বাড়ছে।
হাজিগঞ্জ থেকে ঘুরতে আসা মো. সোহাগ মিয়া জানান, ফেসবুকে দেখে আমি এখানে এসেছিলাম। এখানে এসে দেখি ভিতরে ঢুকতে হলে ৫০ টাকা দিতে হয়। আর এটা ভিতরে নিরাপত্তা অনেক ঘাটতি রয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই প্রশাসনের কাছে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি এটা যেন অতি দ্রুত বন্ধ করে দেওয়া হয়।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অবৈধভাবে আবাসিক মিটার থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হচ্ছে।
চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ মতলব উত্তর জোনাল অফিসের এজিএম শহিদুল ইসলাম স্পষ্ট করে বলেন, সাইড লাইন কিংবা আবাসিক মিটার ব্যবহার করে বাণিজ্যিক কার্যক্রম কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। জরিমানা করা হবে।
এছাড়া সেচ প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ বেড়িবাঁধ দখল করে গাড়ির পার্কিং বানানো হয়েছে—যা ভবিষ্যতে বড় বিপদের কারণ হতে পারে।
তবে স্থানীয়দের প্রশ্ন প্রতিদিন হাজারো মানুষ অবৈধভাবে নদী ব্যবহার করছে, অথচ কর্তৃপক্ষ কেবল ‘অচিরেই ব্যবস্থা’ বলেই দায় সারে।
স্থানীয় কৃষক রফিক মিয়া বলেন, নদী এখন আমাদের নয়, যেন প্রভাবশালীদের। আগে যেখান থেকে পানি ও মাছ পেতাম, এখন সেখানে দুর্গন্ধ আর কৃত্রিম সংকট।
নদী দখলের মতো ভয়াবহ অপরাধ যদি প্রকাশ্যে থেকে যায়, এবং বারবার আইন ভেঙেও কেউ যদি পার পেয়ে যায়, তবে সেটি শুধু নদীর নয়—পুরো রাষ্ট্র ব্যবস্থার পরাজয়।
ধনাগোদা রিভারভিউ ভাসমান রিসোর্ট অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারী সিদ্দিকুর রহমান জানান, আপনারা পেপার পত্রিকায় নিউজ করলে আমার কিছুই হবে না। এত করে আমার রেস্টুরেন্টের প্রচারণা আরো বেশি হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সেলিম সাহেদ বলেছেন, নদী বা বেড়িবাঁধ দখল করা যাবে না, খুব শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক বাসির আলী খান জানান, তাদের ডাকানো হয়েছে, তারা কথা শুনেনি। আমরা জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ব্যবস্থা নেব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি জানান, ধনাগোদা নদীতে রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের পর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ব্যাবস্থা নেওয়ার জন্য। এখন পর্যন্ত ব্যবস্থা কেন নেয়নি, এটা নিয়ে আমি আবার তাদের সাথে কথা বলব।