
সোহেল রুশদী : চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাঁদপুর জেলার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং পর্যটন খাতের বিকাশে চাঁদপুরে পদ্মা, মেঘনা, ডাকাতিয়া নদীর বড়স্টেশন ত্রিমোহনায় মোলহেড এলাকায় একটি আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
গত ৫মে -২০২৫খ্রিস্টাব্দ তারিখে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে চিঠি দেন চাঁদপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন।
এতে বলা হয়, নদীমাতৃক বাংলাদেশের অপূর্ব সৌন্দর্যের এক মণিকোঠা চাঁদপুর জেলার মোলহেড এলাকা, যেখানে পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মিলনধারা এক অনন্য দৃশ্যের সৃষ্টি করেছে। প্রকৃতির অপরূপ শোভায় মোড়ানো এই স্থান জীববৈচিত্র্য ও নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপার সম্ভার, যা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক অসামান্য প্রতিচ্ছবি বহন করে। এটি চাঁদপুরের একটি গুরুত্বপূর্ণ ল্যান্ডমার্ক এবং পর্যটন সম্ভাবনায় এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করতে পারে।
মোলহেডে অবস্থিত তিন নদীর মোহনা, আশপাশের সবুজ বৃক্ষের ছায়ানিবীড় পরিবেশ, নদীর তীরের স্নিগ্ধমাখা আমেজ, জেলেদের ইলিশ ধরার দৃশ্য, মনোরম সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগ করার জন্য এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শণার্থী ভীড় জমায়। কিন্তু মানসম্মত কোন আবাসন ব্যবস্থা ও বিনোদন কেন্দ্র না থাকায় বিভিন্ন স্থান থেকে আগত পর্যটকগণ মোলহেড এলাকায় অবস্থান দীর্ঘায়িত না করে দিনে দিনে প্রত্যাবর্তন করতে বাধ্য হোন। তাছাড়া, মোলহেডের বিপরীত দিকে রয়েছে রাজরাজেশ্বর চর, যেখানে লোকালি মিনি কক্সবাজার নামে পরিচিত একটি পর্যটন সম্ভাবনাময় স্পট রয়েছে।
চিঠিতে পর্যটন ভিত্তিক প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হলোঃ প্রকল্পের নামঃ মোলহেড রিভার ফ্রন্ট ইকো-ট্যুরিজম পার্ক। প্রকল্পের জায়গাঃ মোলহেড এর পার্শ্ববর্তী এলাকা ও পদ্মা-মেঘনা নদী তীরবর্তী রিভারড্রাইভ ও শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণ।
প্রকল্পের উদ্দ্যেশ্যঃএই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে চাঁদপুরকে দেশের অন্যতম প্রধান পর্যটন গন্তব্য হিসেবে গড়ে তোলা। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের জীবনমান উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সুবিধা নিশ্চিত করা।
প্রকল্পে যা যা থাকবেঃ ১. মোলহেড রিভার ফ্রন্ট ইকো-ট্যুরিজম পার্ক নামে একটি ইকো-ফ্রেন্ডলি পার্ক নির্মাণ করা যেতে পারে। যেখানে হোটেল-মোটেল, রিভারওয়ে, ওয়াকওয়ে, ভিউয়ার ডেক ও ওয়াচ টাওয়ার থাকবে।
২. ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আগত পর্যটকদের থাকার জন্য থাকবে নদী-কেন্দ্রিক ইনোভেটিভ কটেজ এর ব্যবস্থা থাকবে। এতে করে বিভিন্ন স্থান থেকে আগত পর্যটকগণ আগেরমত দিনে দিনে ফিরে না যেয়ে তাদের ভ্রমণ দীঘায়িত করবে এবং চাঁদপুরের নদীমাতৃক সৌন্দর্য উপভোগ করবে। ৩. নদীপথে পর্যটকদের জন্য আধুনিক ক্রুজ সার্ভিস চালু করা যেতে পারে যাতে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যটকরা আধুনিক ও বিলাশবহুল এই ক্রুজ সার্ভিসে ৩ নদীর মোহনায় আনন্দদায়ক নৌবিলাস করতে পারে।
৪. ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরকে ধারণ করে একটি আধুনিক রেস্টুরেন্ট থাকবে যেখানে আগত পর্যটকরা তাজা ইলিশ আস্বাদনের স্বাদ পাবেন।
৫. মোলহেডের পাশেই অবস্থিত লঞ্চঘাটকে আধুনিক নাগরিক সুবিধার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। পর্যটকদের জন্য থাকবে বিশ্রামাগার, ওয়াশরুম ও আধুনিক তথ্যকেন্দ্র। ৬. পদ্মা-মেঘনা-ডাকাতিয়া নদীর মিলনস্থলে বোট ট্যুর ও কায়াকিং সুবিধা চালু করা যেতে পারে। ৭. মিনি কক্সবাজারকে একটি টেকসই পর্যটন আকর্ষণ কেন্দ্রে রূপান্তর করা যেতে পারে।
এতে বলা হয়, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে চাঁদপুর জেলার পর্যটন শিল্পে ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।
প্রকল্পের অবকাঠামো: প্রস্তাবিত প্রকল্পে একটি তিনতলা বিশিষ্ট আধুনিক ভবন নির্মান করা হবে। নদী তীরে নৌযান ভিড়ানোর জন্য আধুনিক মিনি ডকইয়ার্ড, পল্টুন এবং মাছ নৌযান থেকে তোলার জন্য কনভেয়ার বেস্ট স্থাপন করা হবে। কনভেয়ার বেল্টে করে ইলিশ মাছ সরাসরি প্রস্তাবিত চারতলা ভবনের নিচতলায় অবস্থিত আধুনিক মৎস্য আড়ৎ এ চলে যাবে। ভবনের বিভিন্ন তলায় যেসকল সুযোগ সুবিধা থাকবে তা নিম্নরূপঃ
নিচ ভলা: ইলিশ বিপণনের জন্য আড়ৎ ঘর যেখানে বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা মাছ ক্রয় বিক্রয় ও নিলাম করতে পারবেন। এরই সাথে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বরফকল এবং মাছ হিমায়িতকরণের সুবিধা থাকবে এখানে। বিদেশে মাছ রপ্তানীর জন্য যথাযথ প্যাকেজিং ও লেবেলিং এর সুবিধা থাকবে। পানি বিশুদ্ধ করণের জন্য ফিল্টারের সুবিধা থাকবে যেখান থেকে নিয়মিত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হবে।
দ্বিতীয় তলা: এখানে একটি ইলিশ জাদুঘর স্থাপন করা হবে। যেখানে চাঁদপুরের মৎস্য সম্পদের ইতিহাস তুলে ধরা হবে। এছাড়াও এখানে চাঁদপুরের রূপালি ইলিশ এর বিস্তারিত গবেষণার তথ্যাদি তুলে ধরা হবে। পর্যটক ও ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য এই জাদুঘর হবে প্রাচীন নদীবন্দর চাঁদপুর সম্পর্কে জানার জন্য এক চমৎকার স্থান।
তৃতীয় তলা: প্রস্তাবিত এই ভবনের তৃতীয় তলায় থাকবে মৎস্যভিত্তিক কর্পোরেট কোম্পানীর জন্য।
অফিস স্পেস: এখানে অফিস স্থাপন করে ভারা দেশে ও বিদেশে চাঁদপুরের মাছ সরবরাহ ও বিপণনের কাজ করতে পারবে।
এছাড়াও এখানে ব্যাংকিং সুবিধা রাখার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ব্যাংকের ব্রাঞ্চ স্থাপন করা হবে, যাতে করে মাছ রপ্তানী করার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা হাতের কাছেই এলসি খোলা ও অন্যান্য ব্যাংকিং সুবিধা পেতে পারেন।
ছাদ রেস্তোঁরা: ইলিশ প্রেমী পর্যটকদের আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে এই ভবনের ছাদে একটি নান্দনিক রেস্তোঁরা স্থাপন করা হবে। যেখানে পর্যটকরা তাদের পছন্দের তাজা ইলিশ মাছের স্বাদ নিতে পারবেন। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে লঞ্চ যোগে চাঁদপুরে এসে অতি সহজেই এই রেস্তোঁরায় পর্যটকরা আহার করতে পারবেন। এরই সাথে চাঁদপুরের ইলিশ মাছ প্রসেসিং ব্যবস্থা স্বচক্ষে অবলোকন করতে পারবেন।