দুইজন দিয়ে চলছে নারায়নপুর পৌরসভা, অনলাইনে মিলছে না সেবা

সমির ভট্রচার্য্য : চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় দুইটি পৌরসভার একটি হলো নারায়ণপুর পৌরসভা। কাগজে-কলমে নবগঠিত এই পৌরসভার জরাজীরর্ণ দোচালা ঘরেই চলছে সেবা কার্যক্রম । একজন প্রশাসক আর কম্পিউটার অপারেটর দিয়ে চলছে অর্ধলক্ষ মানুষের নাগরিক সেবার কাজ।

তার উপর দেড় বছর ধরে অনলাইনে মিলছে না জন্ম নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স, মৃত্যু সনদ, ওয়ারিশ সনদ ও নাগরিক সনদ। বিদ্যালয়গামী ছেলে-মেয়েদের জন্মনিবন্ধন আর বিদেশগামীরা পাসপোর্টের কাজ করতে না পেরে চরম ভোগান্তিতে জনসাধারণ। নবগঠিত এই পৌরসভা এখন হয়ে উঠেছে গলার কাঁটা ।

স্থানীয় বাসিন্দা জুলহাস মিয়া জানান পৌরসভা হওয়া থেকে অধ্যবদি পৌরসভার সাধারণ নাগরিকরা সেবা থেকে শতভাগ বঞ্চিত। নাগরিক সেবা বলতে জন্ম নিবন্ধন সেবা তো টোটালি বন্ধ । তারপর বিশেষ করে বাজারের ট্রেড লাইসেন্স তো মারাত্মক বিষয়। ট্রেড লাইসেন্স নেয়া খুবই কঠিন বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ট্রেড লাইসেন্স নেয়া, জন্ম নিবন্ধন, বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে যারা বিদেশগামী তাদের অনেক কাগজপত্র পৌরসভাকেন্দ্রীক। তাদের কাগজপত্র দ্রুত হাতে পাওয়া খুবই কঠিন বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সেবা নিতে আসা কুহিনুর বেগম জানান, জন্মনিবন্ধন অনলাইন করতে পারি না, বাচ্চাদের টিকাও দিতে পারি না। জন্মনিবন্ধন ছাড়া তো টিকা দেয়া যায় না। এখন অনলাইন যদি চালু হতো তাহলে তো জন্মনিবন্ধন করতে পারতাম। বাচ্চার বয়স বাড়লে নাকি জন্মনিবন্ধন করতে টাকা বেশি লাগে। এখন বাচ্চাদের তো জন্ম হওয়ার সাথে সাথে জন্মনিবন্ধন করা উচিৎ।

জাফর নামের আরেকজন জানান, এখানে আসছি জন্মনিবন্ধনের জন্য। ছেলের বয়স হইছে দেড় বছর। ৬ মাসে থেকেই শুরু করছি এই আসা-যাওয়া। আজও জন্মনিবন্ধন পাইনি । কবে পাবো তাও জানিনা ।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় ভোটার আইডি, ছবি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে নারী-পুরুষের ভীড়। কেউ বিদেশগামী, বয়স্কভাতা, মাতৃত্বভাতা, ট্রেড লাইসেন্স আবার কেউ সন্তানকে স্কুলে ভর্তির জন্য জন্মনিবন্ধনের প্রসঙ্গ নিয়ে কম্পিউটার অপারেটরের চারপাশ ঘিরে আছেন। এটি নারায়াণপুর পৌরসভার প্রতিদিনের ভোগান্তির চিত্র।

মতলব দক্ষিণ উপজেলার নারায়ণপুর পৌরসভার কম্পিউটার অপারেটর মো. নজরুল ইসলাম, কম্পিউটার অপারেটর জানান, এখানে নাগরিক যে সেবাগুলো যেমন সর্বপ্রথম যে সেবাটা জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম দেড় বছর যাবত বন্ধ আছে। প্রত্যেকটা নাগরিক বিদেশ, চাকরি, বাচ্চাদের জন্মনিবন্ধনে ভর্তি বা স্কুলে ভর্তি করার জন্য জন্মনিবন্ধন প্রতিদিন প্রয়োজন হয়। প্রতিদিনই আমাদের কাছে লোকজন খুব যন্ত্রণা করতেছে। কিন্তু আমরা জন্মনিবন্ধনের সেবা দিতে পারতেছি না। আমাদের ইউজার পাসওয়ার্ড দিতে পারতেছে না মন্ত্রনালয় থেকে। সে বিধায় আমরা জন্মনিবন্ধন কার্যকম চালু করতে পারতেছি না।

উপজেলা সামলিয়ে মাঝে মাঝে ছুটে যান পৌরসভার প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। প্রস্তাবিত ওয়ার্ড নাম্বারের গ্যাজেট করার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়। একাধিকবার যোগযোগ করেও সাড়া পাচ্ছে না। এতে অনলাইনে নাগরিক সেবাগুলো চালু করা সম্ভব হয়ে উঠছে না বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নারায়ণপুর পৌরসভার প্রশাসক মো. আমজাদ হোসেন।

তিনি জানান, আমাদের জন্মনিবন্ধন সনদটি সেটি হচ্ছে বেসিক্যালি অনলাইনেই দেওয়া হয়। আমাদের যে প্রস্তাবিত ওয়ার্ড নাম্বারের যে গ্যাজেট করার জন্য আমরা সেটি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি, কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা কোনো ধরনের সাড়া পাইনি বা আমাদের যে গ্যাজেট হওয়ার কথা সেটি হয়নি। না হওয়াতে আমরা অনেকবারই যোগাযোগ করেছি ভার্চ্যুয়ালি বা মুঠোফোনে যোগাযোগ করেছি কিন্তু কোনো ধরনের সাড়া পাওয়া যায়নি। আশা করছি জিও কোড পেয়ে গেলে আমাদের জন্মনিবন্ধন আইডি টা ক্রিয়েট হবে এবং আমরা নাগরিক সেবা যেটি জন্ম নিবন্ধন দিতে পারবো।

এদিকে ২০১০ সালে নারায়ণপুর ইউনিয়নকে পৌরসভায় উন্নীত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তারপর ইউনিয়ন ও পৌরসভা নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষের দায়ের করা মামলা ২০২৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর খারিজ করে নারায়ণপুর পৌরসভা বহাল রেখে পৌরসভার পক্ষে রায় ঘোষণা করে হাইকোর্ট। এরপর থেকে পৌরসভার কার্যক্রম চলেছে।

সম্পর্কিত খবর