চাঁদপুরে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস ২০২৫ উদযাপন উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা

মহসিন হোসাইন: ‘সমৃদ্ধ হোক গ্রন্থাগার এই আমাদের অঙ্গীকার’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে ৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস ২০২৫ উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১ টায় চাঁদপুর জেলা প্রশাসন ও জেলা সরকারি গণ-গ্রন্থাগার মিলনায়তন কক্ষে এ পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

চাঁদপুর জেলা অতি: জেলা প্রশাসক সার্বিক মোস্তাফিজুর রহমান এর সভাপতিত্বে- জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস উপলক্ষে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। তিনি বলেন, আমরা বই পড়ি জ্ঞান বৃদ্ধির জন্যে।

গণগ্রন্থাগারে না এসেও যদি বই পড়ে তাহলেও কোন সমস্যা নাই। প্রতিটি পাড়া মহল্লায় আমরা লাইব্রেরি বা গ্রন্থাগার তৈরি করলাম কিন্তু বই পড়ছি না আমরক, তাহলে কি কোন লাভ হবে। পাঠক না থাকলে গ্রন্থাগার করে লাভ হবে বলে মনে হয় না। আজকের লক্ষ্য শুধু লাইব্রেরি স্থাপন নয়, লাইব্রেরি স্থাপন করে পড়তে হবে।

ডিসি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা ইচ্ছা করলে পারিবারিক গ্রন্থাগার তৈরি করতে পারি। তোমার বাসার পাঠাগারটা তুমি চাইলেই সম্মৃদ্ধি করতে পারো। তোমরা বিভিন্ন কাজে অনেক টাকা পয়সা খরচ করো। তোমরা তোমাদের পিতা-মাতাকে বই কিনার জন্যে বলতে হবে। না পড়লে তোমরা অনেক কিছুই জানবে না। কোনটা ভালো কোনটা খারাপ তা জানতে হলেও পড়তে হবে।

ডিসি আরো বলেন, সমকালীন সময়ে তেমন লেখক বের হচ্ছে না। একদিনে কবি সাহিত্যিক বা লেখক হওয়া যায় না। রবীন্দ্রনাথ ঠাঁকুর, কাজী নজরুল, তাঁরা প্রচুর পড়াশোনা করেছেন। পৃথিবীতে অনেক জ্ঞানী ব্যক্তি রয়েছেন, তাঁরা প্রচুর পড়াশোনা করেছে। শুধু প্রাতিষ্ঠানিক নয় এর বাইরেও তাঁরা অনেক পগেছেন।

অনেক জ্ঞানী ব্যক্তিরা রয়েছেন যারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না লাভ করলে তাঁরা বাহ্যিক অনেক পড়াশোনা করেছেন। তোমরা নিয়মিত পাঠদানের সাথে মেইন ব‌ইগুলোর পাশাপাশি অন্যান্য সাধারণ জ্ঞানমূলক ব‌ইগুলো‌ও পড়তে হবে এবং অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

তিনি আরো বলেন, মিনিমাম নিয়মিত ৩০ মিনিট হলেও এই এই চর্চা করতে হবে। তাহলে তোমরা বাড়তি জ্ঞানের অধিকারী হতে পারবে। জেলা প্রশাসক বলেন, জ্ঞানী বলতে কি বুঝ। একজন ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ার কখনো জ্ঞানী ব্যাক্তি নয়।জ্ঞানী ব্যাক্তি তাকেই বলে, যিনি কিনা ভালো ফিলোসফি জানেন।

যেমন হযরত মুহাম্মদ (সা:) একজন আদর্শ ও ফিলোসফার। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম হলেন ফিলোসফার। তারা যদিও কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত নয়, কিন্তু অনেক জ্ঞানী ছিলেন তাঁরা। তাঁর সব সময় অনেক স্ট্রাগল করতেন। আমরা তাঁদের স্ট্রাগল হয়তো দেখিনি।

তোমরা শিক্ষার্থী যারা আছো, তাঁরা মোবাইল কম দেখবা, ব‌ই বেশি করে পড়বে। তোমাদের উদ্দেশ্যে আরো কিছু কথা বলতে চাই। সেটি হলো, একটি ভালো বই তোমাকে পৃথিবীর অনেক বিষয় সম্পর্কে ধারণা দিবে। ব‌ই যতো বেশি পড়বে, ততো বেশি জানতে পারবে।

তিনি বলেন, তোমরা সব সময় বাবা মায়ের কথামতো গ্রুপ চয়েজ করো, আর সে বিষয়ে লেখাপড়ার করো। এরপর কেউ ডাক্তার, কেই ইন্জিনিয়ার হয়ে উঠো। কিন্তু এটা এক ধরনের চাপিয়ে দেওয়া হয় তোমাকে। আমি বলবো, তুমি একজন শিক্ষার্থী, তুমি নিজেই ভালো জানো তুমি কোন বিষয়ে সবচেয়ে ভালো জানো এবং ভালো করতে পারবে।
তুমি ঠিক সেই বিষয়টি নিয়েই চর্চা করো দেখবে তুমি তোমার সমাজ ও দেশকে অনেক বেশি ভালো কিছু দিতে সক্ষম হবে। এছাড়াও ডিসি বলেন, আজকে যারা পুরস্কার প্রাপ্ত হয়েছো, তারা আগামী দিনে আরো ভালো করবা। আর যারা পুরস্কার প্রাপ্ত হ‌ওনি, তারাও ভালো করার জন্য আরো চেষ্টা করবে।

জেলা প্রশাসক গণ-গ্রন্থাগার এর উপকারিতা সম্পর্কে শিক্ষার্থী সহ সকলকে বলেন, গ্রন্থাগার একটি লাইব্রেরী। এখানে সব ধরনের ব‌ই থাকে। তাই তোমরা লেখাপড়ার পাশাপাশি এখানে এসেও বাড়তি জ্ঞান অর্জনের জন্য সময় ব্যায় করতে পারো।

এছাড়াও চাঁদপুর তারুণ্যের উৎসব মেলায় ব‌ই মেলা শুরু হবে। সেখানে গিয়ে তোমরা একটি হলেও ভালো ব‌ই ক্রয় করে পড়বে। জ্ঞান অর্জনের জন্য পাঠ্যপুস্তকের পাশপাশি আরো বাড়তি পড়তে হবে।আমি তোমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত মঙ্গল কামনা করছি এবং ব‌ই পড়ার প্রতি আরো গুরুত্ব দিবে তোমরা।

বাংলাদেশ গ্রন্থাগার সমিতির চাঁদপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আরিফ বিল্লাহ এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব পিপিএম এর পরিবর্তে চাঁদপুর জেলা অতি: পুলিশ সুপার (হাজিগঞ্জ সার্কেল) মুকুর চাকমা।

মূখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য রাখেন- চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর এ.কে.এম. আবদুল মান্নান।

এছাড়াও বক্তব্য রাখেন- চাঁদপুর সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক- প্রফেসর অমর চন্দ্র দাস, বাংলাদেশ বেসরকারি গ্রন্থাগার চাঁদপুর জেলা সভাপতি – পিএম বিল্লাল হোসেন, বাংলাদেশ বেসরকারি গ্রন্থাগার পরিষদ সাধারণ সম্পাদক- জহিরুল ইসলাম, শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তব্য দেন চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এস.এম. মানজুরুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানের শেষে ১৬ ডিসেম্বর ‘মহান বিজয় দিবস ২০২৪’ উপলক্ষে আয়োজিত চিত্রাংকন ও রচনা প্রতিযোগিতায় এবং ৫ ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস ২০২৫’ উপলক্ষে আয়োজিত বইপাঠ, রচনা, চিত্রাংকন ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে নির্বাচিত বিজয়ীগণের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- চাঁদপুর জেলা সরকারি গণ-গ্রন্থাগার এর কর্মকর্তা- ইকবাল আহম্মদ, আনিস, অভিভাবকবৃন্দ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরাসহ অন্যান্যরা।

সম্পর্কিত খবর