
এইচ এম আরিফ হোসেন : স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) ইমারত নির্মান আইন, ২০০৯ এর ৫০ এর ১ (গ) কে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে নকশাকে অমান্য করে আওয়ামীলীগ সরকারের ক্ষমতাকালীন সময়ে ভাড়াটিয়া লোকজন দিয়ে জোরপূর্বক সরকারি সম্পত্তি দখল করে ৪তলা ভবনের ছাদ নির্মান করেন । আর এই ঘটনাটি হলো চাঁদপুর শহরের বিটি রোড ষোলঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিছনে।
জানাযায় মোসাম্মৎ সাহিদ সুলতানা বেগম ও তার স্বামী মোঃ ওবায়েদ উল্যাহ বিগত ১লা ডিসেম্বর ২০১০ তারিখে ৮৭৬২ নং দলিল মূলে মুহাম্মদ এমদাদুল ইসলাম এর নিকট হতে বিষ্ণুদি মৌজার বি. এস ১২৩৬ দাগ সাবেক ৫৭৮ দাগে ০.০৩ একর ভূমি ক্রয় করেন।
তাদের ক্রয়কৃত সম্পত্তির সাথে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা দেখিয়ে জোরপূর্বক ভাবে ৯২নং বিষ্ণুদী মৌজার ১/১ নং খতিয়ানভুক্ত বি. এস ১৩৪৪ দাগে ০.৪২ একর ভূমির অন্দরে উত্তরাংশে ০.০৩৩৬ একর ভূমি সাহিদা সুলতানা বেগম দখল করে অবৈধভাবে ৪তলা ভবন করে যা এখনো নির্মাণাধীন রয়েছে। স্থানীয় এলাকাবাসী এই অনিয়ম ও সরকারি সম্পত্তি রক্ষার্থে প্রতিবাদ করলে পড়তে হতো সাহিদা সুলতানার রোষানলে।
আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে একাধিক হয়রানি মূলক মামলা দিয়ে স্থানীয়দের নাজেহাল করে রাখে। স্থানীয় হয়েও এলাকাবাসী এই আগত ফ্যাসিস্ট সাহিদা সুলতানা বেগম এর অত্যাচার ও নির্যাতন সহ্য করতে হতো প্রতিনিয়ত। ছাত্রজনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গত বছরের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতন হলে সাহিদা সুলতানার সহযোগী আওয়ামীলীগের নেতারা আত্নগোপনে চলে যায় ।
ছাত্রজনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই নতুন দেশকে সংস্কারের লক্ষ্যে সরকারি সম্পত্ত রক্ষার্থে স্থানীয় মাসুদ মোল্লা গত বছরের ১৮ অক্টোবর জেলা প্রশাসক বরাবর ও ২২ অক্টোবর চাঁদপুর পৌর প্রশাসকের বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের পক্ষে ৩/১০/২০২৪ তারিখে ১৩৬৫ নং স্বারকে রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর অমৃত দেব নাথ এর স্বাক্ষরে সহকারী কমিশনার ভূমি (চাঁদপুর সদর) কে দায়িত্ব দেন।
সহকারী কমিশনার ভূমি’র প্রতিনিধি পৌর ভূমি কর্মকতা মোঃ আব্দুল লতিফ ৯ অক্টোবর সকাল ১১ ঘটিকায় ঘটনারস্থলে তদন্তে আসেন এবং ১৪ অক্টোবর-২০২৪ তারিখে ২৮৪ নং স্বারকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে দ্রুত সীমানা নির্ধারনে সার্ভেয়ার নিয়োগ করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সেই প্রতিবেদনের আলোকে ৩০ নভেম্বর সকাল ১১ ঘটিকায় সীমানা নির্ধারনের জন্য জেলা প্রশাসকের পক্ষে সহকারী কমিশনার ভুমি চাঁদপুর সদর সার্ভেয়ার আর্য্যনন্দ তঞ্চঙ্গ্যাঁ ,
স্কুল শিক্ষিকা সাহিদা সুলতানা বেগমের মনোনীত সার্ভেয়ার শাহাবুদ্দিন, লিজকৃত ভূমি ভোগদগলদারের পক্ষে একজন সার্ভেয়ার সহ ৩ জন সার্ভেয়ার সীমানা নির্ধারন করেন। সার্ভেয়ারা বি এস ম্যাপ ও সি এস ম্যাপ অনুযায়ী উত্তর দক্ষিণ দিক দিয়ে মেপে সীমানা নির্ধারন করেন। সার্ভেয়ার আর্য্যনন্দ তঞ্চঙ্গ্যাঁ পৌর ভূমি অফিসের ২৮৪ নং স্বারকের আলোকে ১৫ ডিসেম্বর -২০২৪ তারিখে সহকারী কমিশনার ভুমি চাঁদপুর বরাবর সীমানা নির্ধারনের প্রতিবেদন দাখিল করেন।
সহকারী কমিশনার ভুমি চাঁদপুর সদর মোঃ আল এমরান খাঁন জেলা প্রশাসকের রাজস্ব শাখার স্মারক ১৩৬৫ আলোকে ৮ জানুয়ারি -২০২৫ তারিখে জেলা প্রশাসকের রাজস্ব শাখা বরাবর প্রতিবেদন দেন। প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন যে বিষ্ণুদী মৌজার ১/১ নং খতিয়ানভুক্ত বি. এস ১৩৪৪ দাগে ০.৪২ একর ভূমির অন্দরে উত্তরাংশে ০.০৩৩৬ একর ভূমি অভিযুক্ত শাহিদা সুলতানা অবৈধভাবে ৪তলা ভবন নির্মাণাধীন অবস্থায় বিদ্যমান পাওয়া যায়। এমতাবস্থায়, সরকারি ভিপি সম্পত্তি স্বার্থ রক্ষার্থে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়,
চাঁদপুর (অর্পিত সম্পত্তি শাখা) ১১৬ নং স্মারকে ২৫/০২/২০২৪ খ্রি. অর্পিত “ক” তফসিল ভূক্ত সম্পত্তি সঠিক রক্ষণাবেক্ষনের নিমিত্ত সি.এস/এস.এ দাগের সাথে তুলনা মূলক নক্সা/পেন্টাগ্রাফ করা প্রয়োজন। নক্সা/পেন্টাগ্রাফ সংগ্রহ পূর্বক পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা যেতে পারে। সহকারী কমিশনার ভুমি চাঁদপুর সদর এর প্রতিবেদনের আলোকে ২০ জানুয়ারি ১০৬ নং স্বারকের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর আমজাদ হোসেন ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সার্ভেয়ার আব্দুর রহিমকে উল্লিখিত বিষয়ে সিএস/এসএ দাগের সাথে তুলনামূলক নক্সা/প্রেন্টাগ্রাফ প্রস্তুতপূর্বক পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেন। সার্ভেয়ার আব্দুর রহিম জানান প্রেন্টাগ্রাফ প্রস্তুত হয়ে গেছে, দ্রুত প্রতিবেদন দিয়ে পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হবে।
পৌরসভার অনুমোদিত নকশা ও ইমারত নির্মান আইনকে কে অমান্য করে সাহিদা সুলতানা বেগম ভবন নির্মান করার করনে চাঁদপুর পৌর প্রশাসক বরাবর ২২ অক্টোম্বর ২৪ ইং আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পৌর প্রশাসকের নির্দেশে সরজমিনে তদন্ত করতে আসেন নক্সাকার মোঃ জাহিদ হোসেন। সরজমিনে তদন্তক্রমে দেখা যায় যে মোসাঃ সাহিদা বেগম গং, চাঁদপুর পৌরসভা থেকে ০৪/০৮/২০১২ ইং তারিখে চাঁপৌস/প্রকৌ/পূত/১০১৪নং স্মারকে একটি চার তালা দালান অনুমোদন করে নেন। অনুমোদিত নক্সার পূর্ব বাহু ১৮’-৬”, পশ্চীম বাহু ২১’-০”, উত্তর বাহু ৫৯’-০”, দক্ষিণ বাহু ৫৯’-০” দেওয়া আছে।
এবং পূর্ব বাহু থেকে ৫’-০” পশ্চিম বাহু থেকে ৩’- ৩” উত্তর বাহু থেকে ৩’-৩” এবং দক্ষিণ বাহু থেকে ৩’-৩” সেট ব্যাকরুল নিয়ে নক্সা অনুমোদন করে নিয়েছেন। কিন্তু সরজমিন তদন্ত ক্রমে দেখা যায় যে, সাহিদা বেগম গং, এর তৈরীকৃত দালানের পূর্ব বাহু ২৩’-৫’ পশ্চীম বাহু ২৬’-৪”, উত্তর বাহু ৬২’-০” এবং পশ্চীম বাহু ৬২’-০” যাহা পৌর আইনের পরিপন্থী।
প্রকৌশলীর উপর বর্তাবে মর্মে অঙ্গীকারনামা পৌরসভা’য় দাখিল করতে হবে। ইমারত আংশিক বা সম্পূর্ণ নির্মাণ সম্পন্ন হবার পর বসবাস বা ব্যবহার সনদপত্র গ্রহণ করতে হবে। নির্মিত ভবনটি পরিদর্শন করে পৌরসভাসমূহ ভবণ ব্যবহারের অনুমতিপত্র প্রদান করবে।
সরেজমিন পরিদর্শনে অনুমোদিত প্ল্যানের সাথে কোন প্রকার বিচ্যুতি ধরা পড়লে মালিক ও সুপারভিশন ইঞ্জিনিয়ারকে তা সংশোধন করতে সুনির্দিষ্ট করে লিখিতভাবে জানাবে। ভবন মালিক সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কিন্তু সাহিদা সুলতানা বেগম এর ভবন নির্মানের ক্ষেত্রে পৌরসভা ইমারত নির্মানের কোন আইন প্রয়োগ না করে বরং মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে সবাই সহযোগিতা করেছে।
এই সুযোগে সাহিদা সুলতানা বেগম ইচ্ছাকৃত ভাবে ক্ষমতার জোরে কোন আইন না মেনে সাথে সরকারি সম্পত্তি ও দখলকরে ভবন নির্মান করে। ইমারত নির্মান আইন ও নকশা অনুমোদিত প্ল্যানের শর্ত ভঙ্গ করার অপরাধে সাহিদা সুলতানা বেগম গং এর বিরুদ্ধে ইমারত নির্মান আইনে নকশার অতিরিক্ত উচ্ছেদ করে তার অনুমতিপত্র বাতিল করতে পারে।
অপরদিকে ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩ এ অবৈধ দখলদারদের বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। কেউ যদি আইনানুগভাবে কোনো জমির মালিক না হয়েও জমি জোর করে দখলে রাখেন, তবে এই অবৈধ দখলের জন্য তাকে এই আইনের ধারা ৭ অনুযায়ী শাস্তি হিসেবে অনধিক ২ বছর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা যেতে পারে। সাহিদা বেগম অবৈধ ভাবে সরকারি সম্পত্তি দখল করার অপরাধে জেলা প্রশাসক আইন অনুযায়ী সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার করে সাহিদা সুলতানা বেগম এর বিরুদ্ধে ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইনে মামলা দায়ের করতে পারে।
সরকারি সম্পত্তি দখল করার অপরাধে ও পৌরসভার নকশা অমান্য করে সরকারি জায়গা দখল করে ভবন করা জন্য নকশা বাতিল করে ফ্যাসিস্ট এই সাহিদা সুলতানা বেগমের বিরুদ্ধে দ্রুত আইন গত ব্যবস্থা গ্রহন করুন।
অভিযুক্ত সাহিদা সুলতানা বেগম বলেন আমি আমার সম্পত্তিতে ভ্রবন নির্মান করেছি। আইনের মাধ্যমে যা হবে তা আমি মেনে নিবো।